অভিযোগ সূত্রে জানা যায়,গাজীপুরের বোর্ডবাজারস্থ মহানগরের গাছা থানাধীন ‘রাঁধুনি রেস্তোরাঁ’
ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশ উপেক্ষা করে আবারো ঝুঁকিপূর্ণভাবে পরিচালিত হচ্ছে।প্রায় দুই বছর আগে হোটেলটির রান্নাঘরে ভয়াবহ বিস্ফোরণে ১ জন নিহত ও ১৭ জন আহত হয়েছিল। ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয়েছিল হোটেলসহ আশপাশের এলাকা।বিস্ফেরণের ঘটনায় গাজীপুর জেলা প্রশাসন কর্তৃক গঠিত পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি একমাস পরে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। উক্ত তদন্ত কমিটির সুপারিশকে কোন তোয়াক্কা না করেই ফের ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে হোটেলটির কার্যক্রম পরিচালিত হওয়ায় আশপাশের ভবন মালিকরা রয়েছেন আতঙ্কে। পুনরায় দুর্ঘটনার আশঙ্কা ব্যক্ত করে পাশের বাসিন্দারা গাজীপুর জেলা প্রশাসকসহ বিভিন্ন দফতরে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।
অভিযোগে বলা হয়,গত ২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বর রাত পৌনে ২টায় বোর্ড বাজারে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের পাশে রাঁধুনি রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ বিস্ফোরণে ভবনটির আন্ডারগ্রাউন্ড ও নিচ তলা সম্পূর্ণ বিধ্বস্ত এবং ২য় ও ৩য় তলা আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণ এতোটাই শক্তিশালী ছিল যে,ভবনটির বেজমেন্টের কিছু অংশ উড়ে গিয়ে মহাসড়কের বিপরীত পাশে প্রায় দেড়শ’ ফিট দূরে অবস্থিত বোর্ড বাজার কেন্দ্রীয় জামে মসজিদ ও মসজিদের মিনারে গিয়ে আঘাত হানে। মসজিদটির ক্ষতিগ্রস্ত অংশ আজোও দৃশ্যমান রয়েছে। এ বিস্ফোরণে পাশের তৃপ্তি হোটেল,ভাই ভাই সুপার মার্কেট ও সুরভী আইডিয়াল স্কুলও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বিস্ফোরণে রাঁধুনি রেস্তোরাঁ ধ্বংসস্তুপে পরিণত হওয়ার পর ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স কর্তৃপক্ষ ভবনটি ঝূঁকিপূর্ণ ঘোষণা দিয়ে সেখানে ব্যানার টানিয়ে দেয়। পরবর্তীতে রাজউকের অনুমোদন বর্হিভূতভাবে পরিত্যাক্ত ভবনটি যেনতেনভাবে সংস্কার করে পুনরায় রাঁধুনি রেস্তোরাঁ চালু করা হয়। হোটেলটি চালুর আগে এ সংক্রান্তে গঠিত তদন্ত কমিটির সুপারিশকে কোন তোয়াক্কা করা হয়নি বলে অভিযোগ করা হয়। এ ব্যাপারে প্রয়োজীয় ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য গাজীপুর জেলা প্রশাসক,পুলিশ কমিশনার- গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ-জিএমপি,গাজীপুর তিতাস গ্যাস ও ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ করেন রেজানুর ইসলাম নামের রাঁধুনি রেস্তোরার পাশের বাসিন্দা। বৃহস্পতিবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, রাঁধুনি রেস্তোরাঁর রান্নাঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখা হয়নি। ফলে রান্না ঘরের চুলার ধোঁয়া কুন্ডলি পাকিয়ে ভবনটির বেজমেন্টসহ আশপাশ এলাকা অন্ধকারে আচ্ছন্ন করে আছে। উল্লেখ্য,রাঁধুনি রেস্তোরাঁয় বিস্ফোরণের ঘটনায় গাজীপুরের তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্টেট মো. শাহীনুর ইসলামকেে আহ্বায়ক করে ঘটনার দিনই পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। কমিটি ওই বছরই ১৭ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়। তদন্ত প্রতিবেদনে বিস্ফোরণের কারণ দেখানো হয়,যেহেতু দুটি রেস্টুরেন্ট পাশাপাশি অবস্থিত ছিল। উভয় রেস্টেুরেন্টের রান্না করার চুলা আবদ্ধ রুমে ছিল এবং বাংলা রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের চুলা বেইজমেন্টে অবস্থিত। রান্না কাজে তৃপ্তি রেস্টুরেন্ট ও রাঁধুনি রেস্টুরেন্ট কতৃক প্রাকৃতিক গ্যাস, সিএনজি ও এলপিজি ব্যবহার করা হতো। সিএনজি এর চিকন পাইপ ফেটে অথবা প্রাকৃতিক গ্যাসের লাইন বা লাইনের ভাল্পের গোড়া লিকেজ হয়ে ভবনের বেইজমেন্ট ও ১ম তলাতে অবস্থিত রেস্টুরেন্টে গ্যাস জমা হয় এবং উক্ত গ্যাস বাতাসের সাথে মিশে বিস্ফোরক মিশ্রণ তৈরি করে। রাতে হোটেল পরিষ্কার করে বন্ধ করার সময় বৈদ্যুতিক সুইচ অন/অফ করার সময় স্পার্কের মাধ্যমে রাঁধুনি রেস্টুরেন্টের পেছনের দিকে বেইজমেন্টে অবস্থিত রান্না ঘরে বিস্ফোরণটি ঘটে বলে তদন্ত কমিটির সকল সদস্যের কাছে প্রতিয়মান হয়েছে।
কমিটি এরূপ ঘটনা প্রতিরোধে ৫টি সুপারিশও পেশ করে। তা হলো,(১) প্রাকৃতিক গ্যাসের পাইপ লাইন এর সাথে সিএনজি বা এলপিজি লাইনের সংযোগ দেওয়া যাবে না। (২) রান্নার কাজে ব্যবহারের উদ্দেশ্যে ভ্যানে রক্ষিত সিএনজি সিলিন্ডারে ফিলিং স্টেশন থেকে গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করতে হবে। (৩) রান্নার ঘরে পর্যাপ্ত আলো বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা না থাকলে উক্ত রান্না ঘরে প্রাকৃতিক গ্যাস এর সংযোগ দেওয়া যাবে না। (৪) তিতাস গ্যাস ডিস্টিবিউশন কতৃক অবৈধ গ্যাস লাইন বন্ধ করতে হবে। (৫) ঝুঁকিপূর্ণ ভবনটি মেরামত করার পূর্বে ব্যবহার করা যাবে না।
রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক ইন্সুরেন্স কোম্পানী থেকে কোটি টাকার ক্ষতিপূরণ পেলেও বিস্ফোরণে ক্ষতিগ্রস্তদের কোনো ধরনের আর্থিক সহায়তা করেন নাই বলে ক্ষতিগ্রস্তরা জানান।
এব্যাপারে রাঁধুনি রেস্তোরাঁর মালিক হাবিবুর রহমান বলেন,তদন্ত প্রতিবেদনে কী আছে আমরা জানি না,কারণ আমরা এখনো তদন্ত প্রতিবেদন পাইনি। রাজউকের নির্দেশনা অনুযায়ী যথাযথভাবেই ভবন পুন:সস্কার করে হোটেল চালু করা হয়েছে এবং রান্না ঘরে আলো-বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা আছে বলেও তিনি দাবী করেন। এদিকে গত ২৭ জুন ২০২১ইং তারিখে রাজধানীর মগবাজারের ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনা পুরো দেশকে নাড়া দিয়েছে । একই ধরণের ঘটনার বির্ভষ বর্ননা দিতে গিয়ে তৃপ্তি হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট এর মালিক বলেন,২০১৯ সালের ৮ সেপ্টেম্বরে এমন ভয়াবহ দৃশ্যের কথা এখনোও মনে হলে আত্মায় পানি থাকে না । হোটেল বন্ধ থাকায়,রাধুনি হোটেল এবং তৃপ্তি হোটেলে কর্মরত ৬০থেকে ৭০ জনের প্রাণ রক্ষা পায় । সৃষ্টিকর্তার অশেষ রহমত ছিল বিধায়,কোন রকমে রক্ষা পেয়েছি নইলে মগবাজারের বিস্ফোরণে যে ১১জন মৃত্যুবরণ করেছে তার চেয়েও ভয়াবহ হতে পারতো । তবে ঐ সময়ে আমার হোটেলে যে পরিমান ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল তা কাটিয়ে উঠতে অনেক ধকল পোহাতে হয়েছে । সম্প্রতি ঢাকা মগবাজারের বিস্ফোরণের ঘটনা আবারও সঙ্কায় ফেলে দিয়েছে । মগবাজারের ঘটনার পর থেকে পাশাপাশি দুটো হোটেল,আশপাশের কয়েক‘শো” মানুষ বর্তমানে সারাক্ষণ আতঙ্কিত । কখন যেন ভয়াবহ বিস্ফোরণ ঘটে ? রেজানুর আরও জানান,কোন কারণে বিস্ফোরণের মত ঘটনা পূনরায় ঘটলে,আমি তো দায় এড়াতে পারবো না । ঘটনার পূনরাবৃত্তি হলে এই দায়ভার কে নিবে ?